“জনগণের মধ্যে আল্লাহ ও আল্লাহর গুণ নিয়ে ভুল ধারণা আছে”—নামক ধারণাটি 'দার্শনিক', 'মুতাকাল্লেমদের' সূক্ষ্ম বোধগত ভুল। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক:
পরকালে আল্লাহকে দেখা যাবে, মারফু হাদীছটি যাদেরই কানে গেছে, তাদের ইন্দ্রিয় জরুরিভাবে আল্লাহকে বন্দাহর প্রত্যক্ষ করা, দেখা যাওয়ার একটা "চিত্র" তৈরি করে। যেরকম আল্লাহ জামাল শব্দটা শোনার পর আল্লাহর সৌন্দর্য ইন্দ্রিয়ে উদিত হয়। কম্পন তোলে। এমন অনন্য "চিত্র", "কম্পন বা সেনসেশন" মহান আল্লাহ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে দেন। কারণ আল্লাহ মা'দুম (অস্তিত্বহীন) নন। তিনি অস্তিত্বশীল, সেটা অনুভব করার জন্যই অনুভূতিলব্ধতা।
'মুতাকাল্লেমরা' (সার্বজনীনভাবে না, অনেকেই) আল্লাহর গুণাবলী শোনার পর, সবার মধ্যে সেনসেশন হওয়ার জ্ঞানকে অনুধাবন করতে পারেন নাই। কারণ তারা মা'কুলাতকে এত প্রাধাণ্য (মিস ইউজিং) দিছিলেন যে, "হিসসি দরুরি" তথা sensational necessity বা ইন্দ্রিয়লদ্ধ অপরিহার্যতার জ্ঞান হতে দূরে সরে পড়ছিলেন।
মজার ব্যাপার হলো, ইবনে তাইমিয়্যা এখানে এক যুগান্তরকারী কালামের অবতারণা করেন। তিনি বলেন, “ওই সেনসেশন দিয়ে আল্লাহর গুণাবলীকে অনুভব করা যায়। আর তা-ই অনুভব করা যায় যার অস্তিত্ব আছে। যার অস্তিত্ব নাই তাকে অনুভব করা যায় না, দেখাও যায় না। ফলে প্রশংসা আদায়ও করা যায় না। আর যার প্রশংসা করা যায় তা স্বয়ং অস্তিত্বশীল এবং তাকে দেখা যাবে, সেনসেশন করা যাবে।”1
অন্যদিকে 'মুতাকাল্লামগণ' কল্পনা করে বসলেন যে, যাকে দেখা যায় তার স্থান আছে, দেহ আছে, দিক-হদ- সীমা-তুলনা-মেছাল আছে। ফলে কিছু গুণাবলীতে তারা নফি করলেন। অপরদিকে সলফে সালেহীন, আইম্মাগণ এছবাতের ট্রেডিশন ইতিহাসে প্রবাহমান রাখলেন।
ইবনে তাইমিয়্যা বলেন, “আল্লাহর গুণাবলী শোনার পর যেই সেনসেশন অনুভব করা যায়, তার সাথে আল্লাহর কাইফিয়তের কোন সম্পর্ক নাই।”2 ফলে আল্লাহ নিজে কি দেহ নাকি দেহহীন, দিক নাকি দিকহীন....এটা নিয়ে ওয়াহী, ফিতরত, আকলের দিক হতে কোন ধারণার পক্ষে অবস্থার করার প্রসঙ্গ অবান্তর। কিন্তু সামাজিক গণমাধ্যমে কোনরূপ পদ্ধতিগত অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করেই নানান সিমপ্লিস্টিক কনক্লুশনের দেখা মিলে।
ইমাম আহমদ নিয়ে ইবনে তাইমিয়্যা বলেন, ধর্মতত্ত্বে (এলমে কালাম) তিনি কেবল বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি দেন নাই, বরং বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি দিয়ে তার ধর্ম্মতাত্ত্বিক প্রতিপক্ষদের যুক্তিসমূহকে মোকাবেলাও করছিলেন।
রিয়ালিটি অনেক সূক্ষ্ম। সূক্ষ্মতাকে ডিফেন্ড ও এক্সপ্লোর করতে গিয়ে উম্মাহর মোহাক্কেকীনরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যেসব কিতাব লিখছিলেন সেটা দেখার ফুরসত যেন আমাদের নাই!
~ নূরে এলাহী শাফাত ভাইয়ের একটি কমেন্ট হতে
মিনহাজুস সুন্নাহ আন নববীয়্যা
Ibn Taymiyya's Theodicy of perpetual optimism by Jon Hoover, p. 52