ইমাম আবু হানিফা কি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন?
ইমামুল আযম আবু হানিফা নুমান বিন সাবিত রাহিমাহুল্লাহ হলেন মুসলিম উম্মাহর সবচাইতে বড় ইমামদের একজন। তাকে প্রধানত মানা হয় ফিকহের ইমাম হিসেবে। বর্তমানে সালাফি/আথারি আকিদার অনুসারীগন তাকে আকিদার ইমাম বলে গন্য করে থাকেন।
বিশ্বজুড়ে সুন্নিদের মধ্যে সবচাইতে বেশী সংখ্যক মানুষই তার মাযহাব গ্রহণ করেছেন বিধায় তাকে অত্যাধিক সম্মান করে থাকেন। কিন্তু তার নামে অভিযোগের ফিরিস্তিও কম নয়, যদিও প্রায় সবই মিথ্যে, ভুল বোঝাবুঝি কিংবা বাড়াবাড়ির কারনে।
সেসব অভিযোগের একটি হলো যে তিনি নাকি রাস্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। ঘটনা কি সত্য? আসলেই কি তিনি তা করেছেন?
উত্তর হলো, না। তিনি সশরীরে বিদ্রোহ করেননি, কিন্তু বিদ্রোহি প্রধাণকে অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে সহায়তা করেছিলেন। তো কার বিরুদ্ধে তিনি সহযোগিতা করেছিলেন? আসলে প্রশ্ন হবে “কাদের কাদের বিরুদ্ধে তিনি সহযোগিতা করেছিলেন”।
ইতিহাস বলে তিনি দু’জন খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহে সাহায্য করেছিলেন; হিশাম ও আল মনসুর।
১) খলিফা হিশাম ইবন আবদুল মালিক বিন মারওয়ান (১০৫–১২৫ হিজরি)
সময়টা ছিল উমাইয়া খিলাফতের। প্রায় ১০০ হিজরিতে আব্বাসীয় বংশের খিলাফতের কাজকারবার শুরু হয়ে যায় ও ইরাক ও খোরাসানের প্রায় সর্বত্রই তাদের প্রতিনিধি ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তি ১০২, ১০৭, ১০৯ হিজরিতে তাদের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালানো হয় উমাইয়া খিলাফত পতনের জন্য।
আর এদিকে বিদ্রোহ দমনের জন্য শাসকগন যাকেই সন্দেহ হয় তাকেই গ্রেপ্তার কিংবা হত্যা করা শুরু করে দেয়। এরকম সময় আহলে বাইত হতে ১২১ হিজরিতে বড় ধরনের বিদ্রোহ হয়। এর নেতৃত্ব দেন যাইদ ইবন আলি, তিনি হলেন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাতি। এদিকে যাইদ ছিলেন ইমাম আবু হানিফার উস্তাদদের মধ্যে একজন। তিনি যাইদকে টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করেন, কিন্তু বিদ্রোহে নিজে অংশগ্রহন করেননি।
২) খলিফা আবু জাফর আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ আল মনসুর (১৩৬-১৫৮ হিজরি)
ইনি হলে দ্বিতীয় আব্বাসী খলিফা। ১৩২ হিজরিতে খলিফা মারওয়ানুল হিমারের হত্যার মাধ্যমে উমাইয়া খিলাফতের পতন ঘটে। এরই সাথে আব্বাসীয় খিলাফত শুরু হয়। ক্ষমতা পেয়ে তারা পাইকারিভাবে পুরো উমাইয়া বংশের মধ্যে গনহত্যা শুরু করে দেয়।
একই সাথে তারা আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর বংশের লোকদের হত্যা করা শুরু করে। হিজরি ১৩৬ সালে খিলাফত পাবার পরে মনসুরও এই কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আলি (রাঃ)-এর এক বিখ্যাত বংশধর “নফসে যাকিয়াহ” নামে প্রসিদ্ধ তাবে-তাবিয়ী মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ তার বিরুদ্ধে ভয়াবহ বিদ্রোহ করে বসেন। সেই বিদ্রোহে অনেক প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ী ইমাম ও আলীম অংশগ্রহণ করেন। এখানেও ইমাম আবু হানিফা অর্থনৈতিকভাবে বিদ্রোহটাকে সাপোর্ট করেছিলেন।
তাহলে কাহিনীটা কি?
আমরা তো জানি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এর আকীদাহ হলো মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনভাবেই বিদ্রোহ করা যাবে না। এমনকি রাষ্ট্রপ্রধান জালিম কিংবা ফাসেক হলেও তার আনুগত্য করতে হবে ও সবর করতে হবে। আর এমন বিদ্রোহ করা খারেজীদের বৈশিষ্ট্য।
এই কারণে ততকালীন আরেক ইমাম আওযায়ী (রহঃ) তাকে অত্যন্ত অপছন্দ করতেন। ইমাম আওযায়ী ছিলেন সিরিয়ার অধিবাসী। তিনি এতো বড়ই ইমাম ছিলেন যে তাকে ইমাম যাহাবী শাইখুল ইসলাম ও হাফিয উপাধিতে ভূষিত করেছেন।
হাদীসের আরেক প্রসিদ্ধ ইমাম আবদুর রহমান ইবনে মাহদী বলেছেন, ‘হাদিসের কেন্দ্রীয় চার ইমামের একজন হলে ইমাম আওযায়ী’। সিরিয়াতে তার নামেও একটি মাযহাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা অনেকের মতে ফিকহে হানাফীর চাইতেও শক্তিশালী ছিল। কিন্তু কালের আবর্তে তা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
তো ইমাম আওযায়ীকে আমিরুল মুমিনীন ফিল হাদিস আবদুল্লাহ ইবন মুবারক (রহঃ) বলতে শুনেছেন,
“আমরা আবূ হানীফার অমুক অন্যায়-ত্রুটি সহ্য করলাম,... অমুক ত্রুটি সহ্য করলাম, ... অমুক অন্যায়-ত্রুটি সহ্য করলাম... কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি উম্মাতে মুহাম্মাদীর উপর অস্ত্র নিয়ে আসলেন!! যখন তিনি উম্মাতে মুহাম্মাদীর মধ্যে অস্ত্র নিয়ে আসলেন তখন আর আমরা তাকে সহ্য করতে পারলাম না।”
এ কারণে ইমাম আওযায়ী ইমাম আবু হানিফার উপর প্রচন্ড ক্ষেপে ছিলেন। অন্য বর্ননায় আছে তাকে তিনি ‘কুফার বিদআতী’ বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীতে তিনি নিজের এই মত প্রত্যাহার করে নিজের ভুল স্বীকার করে নেন বলে বর্নিত আছে।
তাহলে আকীদার ও ফিকহের এতো বড় ইমাম হয়েও কি আবু হানিফা এসব জানতেন না? তিনি কেন উলটো করলেন? তাহলে কি আবু হানিফা (রহঃ) খারেজী ছিলেন?
ইমাম আবু হানিফা নিশ্চয়ই জানতেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার ব্যাপারে ইসলাম কি বলে। উনি যে জানতেন তার প্রমাণ আমরা পাই ইমাম তাহাবীর ‘আকীদাহ তাহাবিয়া’তে। সেখানে তিনি বলেন,
“আমাদের ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধানগণ ও শাসকবর্গ অত্যাচার করলেও তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বৈধ মনে করি না। আমরা তাদেরকে অভিশাপ প্রদান করি না এবং তাদের আনুগত্যও বর্জন করি না। আমরা তাদের আনুগত্যকে আল্লাহরই আনুগত্যের অংশ হিসেবে ফরয মনে করি যতক্ষণ না তারা কোনো পাপ কর্মের নির্দেশ দেয়। আর তাদের সংশোধন ও সংরক্ষণের জন্য দু‘আ করি। আমরা সুন্নাত এবং জামা‘আত (ঐক্য) অনুসরণ করি এবং বিচ্ছিন্নতা, অনৈক্য ও মতবিরোধিতা আমরা পরিহার করি।”
আকিদাহ তাহাবীয়ার শুরুতেই ইমাম তাহাবী উল্লেখ করে দিয়েছেন যে এগুলো ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মুহাম্মদ আশ শাইবানি আর ইমাম আবু ইউসুফের আকিদাহ। তার মানে প্রমাণ হচ্ছে ইমাম আবু হানিফা জানতেন এ বিষয়ে।
এছাড়াও ইমামের ‘আল ফিকহুল আকবার’ রিসালাহটির ব্যাখ্যাগ্রন্থে শাইখ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ থেকেও আমরা কিছু বিষয় জানতে পারি। ইটালিসাইযড বাক্যগুলো শাইখ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহঃ)-এর বইটি থেকে-
হিজরী প্রথম শতাব্দী ও দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রথমাংশ পর্যন্ত কোনো কোনো তাবিয়ী মুহাদ্দিস ও ফকীহ পাপী সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদে অস্ত্রধারণ বৈধ বলে গণ্য করতেন। একে তারা ‘‘ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের’’ অংশ বলে গণ্য করতেন।
কারণ তখন পর্যন্ত এমন অনেক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল যাতে প্রচুর তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীগনের ঈমাম অংশগ্রহণ করেছিলেন। যদিও মূলধারার সাহাবী-তাবিয়ীগণ এরূপ বিদ্রোহের বিরোধিতা করেছেন কিন্তু তারা এসবে অংশগ্রহণকারী বা বৈধতাদানকারীদেরকে বিভ্রান্ত বলেন নি। বরং তাঁরা ইজতিহাদে ভুল করেছেন বলে গণ্য করেছেন এবং তাঁদের জন্য দুআ করেছেন।
আর কন্ট্রারি টু পপুলার বিলিফ, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এর পুর্নাংগ আকিদাহ যা আমরা এখন সিটেমাইজডভাবে শিখি, তা ঠুস করে একদিনে এস্টাব্লিশড হয়ে যায়নি। ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে ফিতনাহ আর বিভিন্ন ভ্রান্ত গোষ্ঠীদের বিপরীতে সহিহ আকিদাহর পয়েন্টগুলো একের পর এক জমা হতে থাকে। (কিন্তু এটা আরেক ট্যানজেন্ট। এই এভল্যুশন অফ আকিদাহ নিয়ে আলাদা করে কোন একদিন লেখা ইচ্ছে আছে।)
যদিও খারিজীদের আকীদার মূলনীতি হলো আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকারের নামে সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা, কিন্তু আবু হানিফার সময়ে তখনো পাপী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটা খারেজীদের একক বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এবং ইজতিহাদের ভিত্তিতে অনেক ইমামই একে জায়েয বলেছেন। দ্বিতীয় শতকের মাঝামাঝি থেকে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মুহাদ্দিস ও ফকীহগণ একমত হয়ে যান যে, জালিম বা পাপী সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ বৈধ নয়। তাই পরবর্তিতে সকল নস একত্রিত করে ও বাস্তবতায় এতো রক্তপাত বন্ধের নিরিখে ফিতনাহ কমানোর লক্ষ্যে মূলধারার মুহাদ্দিস ও ফকীহগণ আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদার মধ্যে পাপী সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণের অবৈধতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
তাহলে নুমান ইবন সাবিত প্রথম উম্মাতের মধ্যে অস্ত্র নিয়ে আগমন করেন নি। তাঁর পূর্বে ও সমসাময়িক অনেক সুপ্রসিদ্ধ ফকীহ ও মুহাদ্দিস পাপী সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণের বৈধতায় বিশ্বাস করেছেন। এ বিষয়ক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আগে, তাঁর যুগের কাউকে এ মত পোষণের জন্য বিভ্রান্ত বলা যায় না।
অর্থাৎ, ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) খারেজী তো মোটেই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন মুজতাহিদ। তার ইজতেহাদে সেই দুই খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েয ছিল, তাই তিনি যেভাবে পেরেছেন সহযোগিতা করেছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি কেন বিদ্রোহে শামিল হয়েছিলেন? এই দুই খলিফা কি এমন দোষ করেছিলেন? আমার মতে, এই প্রশ্নের উত্তর উত্তর দুই খলিফাতে নয়, বরং তাদের বংশে।
সেটা আমি কীভাবে বললাম? কারণ খলিফা দু’জন হলে দুই ডিফারেন্ট বংশের। প্রথমজন ছিলেন উমাইয়া। পড়ে মনে হতে পারে তিনি হয়তো আব্বাসী খিলাফতের সাপোর্টার। পরে দেখা গেলো তিনি আব্বাসী খলিফা মনসুরকেও সরাতে চাচ্ছেন!
তাহলে তিনি চান কী? ধন-সম্পদ বা গৌরব নাকি ক্ষমতা? একটাও না। কারণ দুই বংশের দুই ‘বিদ্রোহিত’ রাষ্ট্রই ইমামকে ধন-সম্পদ, গৌরব আর ক্ষমতা দিতে চেয়েছিলেন।
খলিফা হিশামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ব্যর্থ হবার পর, পরবর্তী ও শেষ উমাইয়া খলিফা মারওয়ান ইরাকের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত করেন ইয়াযিদ ইবন উমারকে। এই ইয়াযিদ ইমামকে ইরাকের কাযী হিসেবে নিযুক্ত করতে চান। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন- ইয়াযিদ যদি আমাকে মসজিদের দরজা গুনতে বলে, তবুও আমি তার জন্য তা করে দেব না।
আবার আব্বাসী খলিফা মনসুরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ব্যর্থ হবার পরও তাকে ইরাকের প্রধান বিচারপতি হতে বলা হয়। এবারও তিনি তা ফিরিয়ে দেন। এ নিয়ে ইমাম ও মনসুরের মধ্যে মজার কথোপকথন আছে যেটা অন্য কোথাও থেকে পড়ে নেবেন। মনসুর রেগেমেগে ইমামকে বন্দি করে ফেলেন। ইমাম আবু হানিফা পরবর্তিতে এই বন্দিত্বেই মৃত্যুবরণ করেন। রাহিমাহুল্লাহ।
আমরা দেখতে পারছি, দুই খলিফার মধ্যে কোন কমন ডেনোমিনেটর নেই; অর্থাৎ দু’জন দুই বংশের। আর যদি বলি দু’জনের জালিম ও পাপী, তাহলে আকিদাহ তাহাবীয়া থেকে জানতে পারছি ইমামের আকীদাহ ছিল যে শাসক পাপী ও জালিম হলেও তাকে মানতে হবে, বিদ্রোহ করা যাবে না। তাহলে কাহিনী কি?
আসুন এবার শাসক না দেখে তিনি যাবের সাপোর্ট করেছিলেন তাদের মধ্যে কমন কিছু পাই নাকি দেখি। হ্যাঁ, দু’জনেই হলেন আলি ইবন আবি তালিম রাদিয়াল্লাহু আনহুর বংশধর, আহলে বাইত। দু’জনেই আহলে বাইতের খিলফতের পক্ষ হতে বিদ্রোহ করেছিলেন আর ইমাম আবু হানিফা দু’জনকেই উমাইয়া ও আব্বাসী খিলাফতের বিপরীতে সমর্থন করেছিলেন।
আহলে বাইতের প্রতি ইমামের ভালোবাসা যেমন প্রসিদ্ধ তেমনি তাদের প্রতি এই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশও প্রসিদ্ধ, বিশেষ করে শিয়াদের কাছে। কারণ তারা উমাইয়া ও আব্বাসী খিলাফতের কোনটাকেই ভ্যালিড খিলাফত মনে করে না। তাদের কাছেও আহলে বাইতের খিলাফতই একমাত্র ভ্যালিড খিলাফত, এটা প্রতিষ্ঠিত।
ইমামে আযমের সময়ে তখনো শিয়া মতবাদ আকিদাগতভাবে সুন্নিদের থেকে পৃথক হয়ে উঠেনি। তাই আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে খিলাফতের বিরোধিতা করা সেসময় প্রধানত পলিটিক্যাল ব্যাপার, আর ইমামদের ক্ষেত্রে তা ছিল ইজতিহাদ।
নিশ্চয়ই আহলুল বাইতের প্রতি ভালোবাসা প্রতিটা মুসলিমের দায়িত্ব। কারণ আহলুল বাইতকে ভালোবাসা মানে স্বয়ং নবি ﷺ-কেই ভালোবাসা। কিন্তু সেই ভালোবাসার জন্য আমরা উমাইয়া ও আব্বাসী খিলাফতকে বাতিল বলি না।
ইমাম আবু হানিফার আহলুল বাইতের বংশধরের প্রতি ভালোবাসা বেশী থাকাটা স্বাভাবিক। প্রথমত, তিনি ছিলেন কুফার বাসিন্দা যেখানে আলি রাঃ তার খিলাফতের রাজধানি স্থাপন করেছিলেন। এই কুফাকে কেন্দ্র করেই হুসাইন (রাঃ)-এ শাহাদাতের ঘটনা। এই কুফাতেই আহলুল বাইতের প্রতি ভালোবাসা মানুষের মাঝে সবচাইতে বেশী। এই কুফাতেই শিয়াদের উৎপত্তি যাদের আহলুল বাইতের প্রতি ভালোবাসাই ছিল প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য।
এছাড়া ইমাম আবু হানিফার উস্তাদ ছিলেন যাইদ, যাকে তিনি উমাইয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে সাহায্য করেছিলেন। যাইদ ছিলেন আহলুল বাইত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর আপন নাতি। আহলুল বাইতের আরেক সদস্য ইমাম জাফর আস সাদিক (রহঃ) ছিলেন তার আরেক উস্তাদ। পরবর্তি বিদ্রোহি তাবে-তাবিয়ী মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ যদি ইমামের কাছে বন্ধু হয়ে থাকেন সেটাও অস্বাভাবিক কিছুই হবে না।
এসব কারণে আহলুল বাইতের প্রতি ইমামে আযমের বেশী ভালোবাসা থাকাটাই স্বাভাবিক। আর আহলুল বাইতের প্রতিও আমাদের ভালোবাসা প্রচুর। আমরা জানি তাদের উপর জুলুম হয়ে এসেছে অনেক আগে থেকেই।
তাহলে দেখা যাচ্ছে খলিফা পাপিষ্ঠ, ফাসিক কিংবা জালিম হবার কারণে ইমাম আবু হানিফা তাদের বিদ্রোহ করেননি, বরং তিনি আহলুল বাইতকে খিলাফতের প্রধান দাবীদার হিসেবে মনে করে সেই দুই বিদ্রোহকে সমর্থন করেছিলেন।
বিঃ দ্রঃ – এখানের রিসার্চ নিতান্তই আমার নিজের। ভুল হলে শুধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো।