আয়াত ২২-২৩
مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا ۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ لِكَيْلَا تَأْسَوْا عَلَىٰ مَا فَاتَكُمْ وَلَا تَفْرَحُوا بِمَا آتَاكُمْ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ
তোমাদের উপর যে মুসিবত আপতিত হয় তার মধ্যে এমন একটিও নেই যা আমি ঘটানোর পূর্বেই এক কিতাবে লিখে রাখিনি। নিশ্চয়ই তা করা আল্লাহর জন্যে খুবই সহজ। (এটা এজন্য করি) যাতে তোমরা যা হারিয়েছো তার কারনে বিমর্ষ না হও, কিংবা আল্লাহ যা দান করেছেন তাতে (অতিরিক্ত) উল্লসিত না হয়ে যাও। আল্লাহ কোন উদ্ধত অহংকারীকে ভালোবাসেন না।
যমিনের বিপদগুলো হলো বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন ভুমিকম্প, ভূমিধ্বস, সুনামি ইত্যাদি। আর নিজেদের মধ্যকার মুসিবতগুলোর মধ্যে আছে রোগ-শোক, এক্সিডেন্ট ইত্যাদি। এ সমস্ত কোন আল্লাহর জ্ঞান, লেখন ও ইচ্ছে ছাড়া হতে পারে না। ঘটনা ঘটবার বহু আগ হতেই, অর্থাৎ বিশ্ব সৃষ্টির পঞ্চাশ বছর আগে থেকেই তিনি এসব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিখে রেখেছেন।
এই কথাটি উল্লেখ করবার কারন আল্লাহ পরের আয়াতেই দিচ্ছেন, যেন তাকদিরের এই ফয়সালা মেনে নেবার মাধ্যমে ভয়ানক বিপদে আমরা সবর করতে পারে। যেন বিপদের কারনে আত্নহারা হয়ে মুর্ছিত না হয়ে পড়ে, কিংবা ডিপ্রেশনে পড়ে জীবনটা থমকে না দেয়।
একইসাথে তাকদিরের বিশ্বাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের উপর যেন অতিরিক্ত খুশিতে আত্নহারা না হয়ে যায় কেউ। এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, এখানকার নেয়ামতও তাই। পূর্বের আয়াতে বর্ণিত কুফফার তথা কৃষক যেভাবে খুশিতে ভরে গিয়েছিল ফসল দেখে, মুমিন তার নিজ জিবনের ফসল দেখে এভাবে আত্নহারা হয়না। সে আল্লাহর শোকর আদায় করে, নেয়ামতের কদর করে। নেয়ামতের কারনে নিজেকে নিয়ে বড়াই করে না, অহংকার করে না। আল্লাহ এমন উদ্ধত অহংকারীকে ভালোবাসেন না। অহংকার শুধুমাত্র আল্লাহর পোশাক।
আয়াত ২৪
ٱلَّذِينَ يَبْخَلُونَ وَيَأْمُرُونَ ٱلنَّاسَ بِٱلْبُخْلِ ۗ وَمَن يَتَوَلَّ فَإِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلْغَنِىُّ ٱلْحَمِيدُ
যারা নিজে বখিলতা (কৃপণতা) করে ও অন্যদেরও বখিলতা করার উৎসাহ দেয়, আর যারা (আল্লাহর পথে ব্যয় হতে) মুখ ফিরিয়ে নেয় (তারা জেনে রাখুক), নিশ্চ্যয়ই আল্লাহ অভাবমুক্ত, চির প্রশংসিত।
অধিকাংশ অহংকারী ধনী ব্যক্তিদের অবস্থা এটাই হয়ে থাকে যে, তারা খুব গর্ব ও বড়াই তো করে, কিন্তু খরচ করার সময় তাদের পকেট থেকে পয়সা বের হয় না। কোনো সৎকর্মে ব্যয় করার তাওফীকও তাদের হয় না এবং অন্যদেরও এ সবই শেখায়। বস্তুত, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আগে বেড়ে ব্যয় করা আল্লাহর উপর ভরসাকারী ও সাহসী ব্যক্তিদেরই কাজ, যারা টাকা-পয়সার সাথে মহব্বত রাখে না এবং তারা জানে, সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা সবই একচ্ছত্র মালিকের (অর্থাৎ আল্লাহর) পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। [তাফসীরে উসমানি]
সে সময় মুসলিম সমাজের মুনাফিকদের যে চরিত্র সবারই চোখে পড়ছিলো এখানে সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। ঈমানের বাহ্যিক স্বীকারোক্তি অনুসারে মুনাফিক ও খাঁটি মুসলমানদের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না। কিন্তু নিষ্ঠা ও ঐকান্তিকতা না থাকার কারণে খাঁটি ঈমানদারদের যে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছিলো, তারা তাতে শামিল হয়নি। তাই তাদের অবস্থা ছিল এই যে, আরবের অতি সাধারণ একটা শহরে যে নাম মাত্র স্বচ্ছলতা ও পৌরহিত্য তারা লাভ করেছিলো তাতেই তারা যেন গর্বে স্ফীত হয়ে উঠছিলো এবং ফেটে পড়ার উপক্রম হয়েছিলো। তাদের মনের সংকীর্ণতা এমন পর্যায়ের ছিল যে, তারা যে আল্লাহর ওপর ঈমান আনার, যে রসূলের অনুসারী হওয়ার এবং যে দ্বীন মানার দাবী করতো, সেই দ্বীনের জন্য নিজেরা একটি পয়সাও ব্যয় করবে কি, অন্য দাতাদেরও একথা বলে ব্যয় করা থেকে বিরত রাখতো যে, “তোমরা নিজের অর্থ এভাবে অপচয় করছো কেন?” [তাফহীমুল কুরআন]
কিন্তু তারা যতোই কৃপণতা করুক না কেন, আল্লাহ অভাবমুক্ত। সমস্ত দুনিয়ার ভান্ডার তাঁর মুঠোয়। তাঁর দ্বীনের কাজ এগিয়ে যাবে, ইসলাম এগিয়ে যাবে তাদের ছাড়াই। মুলত তারাই ইসলামের অভাবে পেছনে পড়ে থাকবে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।
আয়াত ২৫
لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِٱلْبَيِّنَـٰتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ ٱلْكِتَـٰبَ وَٱلْمِيزَانَ لِيَقُومَ ٱلنَّاسُ بِٱلْقِسْطِ ۖ وَأَنزَلْنَا ٱلْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌۭ شَدِيدٌۭ وَمَنَـٰفِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ ٱللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥ وَرُسُلَهُۥ بِٱلْغَيْبِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ قَوِىٌّ عَزِيزٌۭ
আমি রাসুলগনদের অবশ্যই সুস্পষ্ট প্রমাণ সহকারে পাঠিয়েছি ও তাদের সাথে নাযিল করেছি কিতাব ও মিযান (হক ও বাতিলের মানদণ্ড) যাতে মানুষ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। আমি আরও নাযিল করেছি লোহা, তাতে রয়েছে প্রচণ্ড (সামরিক) শক্তি ও মানুষের জন্যে কল্যাণ—যেন আল্লাহ জেনে নিতে পারেন কারা তাঁর ও তাঁর রাসুলগনের না দেখেও সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহা শক্তিমান, মহাপরাক্রমশালী।
অর্থাৎ আল্লাহ সমস্ত রাসুলদের পাঠিয়েছেন সুস্পষ্ট প্রমাণ সহ, যেন কেউ অস্পষ্টতা বা অন্য কোন অযুহাত দেখাতে না পারে বিচারকালে। আর তাদের সাথে কিতাব অর্থাৎ আইন দিয়েছেন আর দিয়েছেন মিযান। এই দুয়ের মাধ্যমে যেন রাসুল আর মানুষ সমাজে জাস্টিস প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
এ সংক্ষিপ্ত আয়াতাংশে নবী-রসূলের মিশনের পুরা সার সংক্ষেপ বর্ণনা করা হয়েছে, যা ভালভাবে বুঝে নিতে হবে। এতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে পৃথিবীতে যত রসূল এসেছেন, তারা সবাই তিনটি বিষয় নিয়ে এসেছিলেনঃ
একঃ বায়্যিনাত অর্থাৎ স্পষ্ট নিদর্শনাবলী, যা থেকে স্পষ্টরূপে প্রতিভাত হচ্ছিলো যে, তাঁরা সত্যিই আল্লাহর রসূল। তাঁরা নিজেরা রসূল সেজে বসেননি। তাঁরা যা সত্য বলে পেশ করছেন তা সত্যিই সত্য আর যে জিনিসকে বাতিল বলে উল্লেখ করেন তা যে সত্যিই বাতিল তা প্রমাণ করার জন্য তাঁদের পেশকৃত উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহই যথেষ্ট। সুস্পষ্ট হিদায়াতসমূহ, যাতে কোন সন্দেহ-সংশয় ছাড়া বলে দেয়া হয়েছিল----আকায়েদ, আখলাক, ইবাতদ-বন্দেগী এবং আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে মানুষের জন্য সঠিক পথ কি-- যা তারা অনুসরণ করবে এবং ভ্রান্ত পথসমূহ কি যা তারা বর্জন করবে।
দুইঃ কিতাব, মানুষের শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব দিক নির্দেশনা এতে বর্তমান যাতে মানুষ পথনির্দেশনার জন্য তার স্মরণাপন্ন হতে পারে।
তিনঃ মিযান, অর্থাৎ হক ও বাতিলের মানদণ্ড যা দাঁড়ি পাল্লার মতই সঠিকভাবে ওজন করে বলে দিবে চিন্তা ও ধ্যান-ধারণা, নৈতিকতা ও পারস্পরিক লেনদেনে প্রাচুর্য ও অপ্রতুলতার বিভিন্ন চরম পন্থার মধ্যে ইনসাফ ও ন্যায় বিচার কোন্টি।
নবী-রসূলদেরকে এ তিনটি জিনিস দিয়ে যে উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে তা হচ্ছে পৃথিবীতে মানুষের আচরণ এবং মানব জীবনের বিধি-বিধান ব্যক্তিগত ও সামগ্রিকভাবেও যেন ন্যায় বিচারের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
একদিকে প্রতিটি মানুষ তার আল্লাহর অধিকার, নিজের অধিকার এবং আল্লাহর সেসব বান্দাদের অধিকার সঠিকভাবে জানবে এবং ইনসাফের কথা আদায় করবে যার সাথে কোন না কোনভাবে তাকে জড়িত হতে হয়। অপরদিকে সামাজিক জীবনের বিধি-বিধান এমন নীতিমালার ওপর নির্মাণ করতে হবে যাতে সমাজে কোন প্রকার জুলুম অবশিষ্ট না থাকে। সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতিটি দিক ভারসাম্যহীনতা থেকে রক্ষা পায়, সমাজ জীবনের প্রতিটি বিভাগে সঠিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সমাজের সবাই যেন ইনসাফ মত যার যার অধিকার লাভ করে এবং নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে পারে।
অন্য কথায় ব্যক্তিগত ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠাই ছিল নবী-রসূলদের প্রেরণের উদ্দেশ্য। তারা প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত জীবনেও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে উদগ্রীব ছিলেন, যাতে তার মন-মগজ, তার চরিত্র অ কর্ম এবং তাঁর ব্যবহারের ভারসাম্য সৃষ্টি হয়। তারা গোটা মানব সমাজেও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী ছিলেন যাতে ব্যক্তি এবং ব্যষ্টি উভয়েই পরস্পরের আত্মিক, নৈতিক ও বৈষয়িক উন্নতির পথে প্রতিবন্ধক ও সাংঘর্ষিক হওয়ার পরিবর্তে সহযোগী ও সাহায্যকারী হয়। [তাফহিমুল কুরআন]
আয়াতে কিতাবের ন্যায় মিযানের বেলায়ও নাযিল করার কথা বলা হয়েছে। কিতাব নাযিল হওয়া এবং ফেরেশতার মাধ্যমে নবী-রাসূলগণ পর্যন্ত পৌঁছা সুবিদিত। কিন্তু মিযান নাযিল করার অর্থ কি? এ সম্পর্কে বিভিন্ন তাফসীরে বিভিন্ন উক্তি এসেছে, কোন কোন মুফাসসির বলেন, মীযান নাযিল করার মানে দাঁড়িপাল্লার ব্যবহার ও ন্যায়বিচার সম্পর্কিত বিধানাবলী নাযিল করা। [জাকারিয়া]
কেউ কেউ এর অনুবাদ করেছেন দাঁড়িপাল্লা। দাঁড়িপাল্লা অবতীর্ণ করার অর্থ হল, আমি দাঁড়িপাল্লার দিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছি যে, এর দ্বারা ওজন করে মানুষকে পুরো পুরো প্রাপ্য দিয়ে দাও। [আহসানুল বায়ান]
তাহলে মিযান অর্থ সত্য মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠি। এটা আল্লাহ তা’আলা যেমন বিধান হিসেবে কিতাবসমূহে নাযিল করেছেন, তেমনি মানুষের ফিতরাত ও আকলের মধ্যেও নাযিল করে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে মানুষ প্রাকৃতিকভাবে বুঝতে পারে কোনটি ন্যায় আর কোনটি অন্যায়। এটা হলো হিকমাহ।
সাথে তিনি লোহা তথা মেটালও নাযিল করেছেন যেন প্রয়োজনে শক্তির ব্যবহার করে সেই আদল ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, এখানে লোহা অর্থে রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিকে বুঝানো হয়েছে। বাক্যের প্রতিপাদ বিষয় হচ্ছে আল্লাহ তা’আলা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য শুধু একটা পরিকল্পনা পেশ করার উদ্দেশ্যে রসূলদের পাঠান নাই। কার্যত তা প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা চালানো ও সে উদ্দেশ্যে শক্তি সঞ্চয় করাও তাদের মিশনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। যাতে এ প্রচেষ্টার ধ্বংস সাধনকারীদের শাস্তি দেয়া যায় এবং এর বিরুদ্ধে বাঁধা সৃষ্টিকারীদের শক্তি নির্মূল করা যায়।
আর সাথে সাথে এটা যেহেতু দুনিয়াবি শক্তিশালী সামান, এর ব্যবহার শুধু শক্তি প্রয়োগেই নয়, বরং আরও অনেক ভালো ভালো কাজে ব্যবহার করাও যেতে পারে। যেমন সিভিলাইজেশন বিল্ডিং, industrialization, সংসারের আসবাবপত্র।
এসবের মাধ্যমে আল্লাহ দেখে নেবেন কীভাবে মানুষ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে না দেখেও তাদের পথে চলে, তাদের দ্বীনের খেদমত করে, জিহাদ ও সৎ পথে চলার মাধ্যমে, ইনসাফ ও আদল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
এমন মনে করার কারণ নেই যে আল্লাহ সেই আদল ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করার শক্তি রাখেন না। না! বরং তিনি কাউইউন আযিয, মহাশক্তিধর, মহাপরাক্রমশালী। তিনিই সমস্ত শক্তির আধার, লোহা নয়, মেটালের তৈরি ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, বোমা, গোলাবারুদও নয়। এসব তো সামান মাত্র। এগুলোর প্রতি শক্তির জন্যে নির্ভর হওয়া যাবে না। নির্ভর করতে হবে একমাত্র কাউইউন আযিযের প্রতি।
আয়াত ২৬
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًۭا وَإِبْرَٰهِيمَ وَجَعَلْنَا فِى ذُرِّيَّتِهِمَا ٱلنُّبُوَّةَ وَٱلْكِتَـٰبَ ۖ فَمِنْهُم مُّهْتَدٍۢ ۖ وَكَثِيرٌۭ مِّنْهُمْ فَـٰسِقُونَ
আর নিশ্চয়ই আমি নুহ ও ইব্রাহিমকে (রাসুল হিসেবে) পাঠিয়েছিলাম ও তাদের বংশধরদের মধ্যে বজিয়ে রেখেছিলাম নুবুয়াত ও কিতাব। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক সৎপথ অবলম্বন করেছিল (মুহতাদিন) এবং বহু সংখ্যক ছিল ফাসিক।
এখানে নুহ ও ইব্রাহিম (আঃ) দুজনের নাম আলাদা করে উল্লেখ করবার কারন সম্ভবত এই যে, এনারা দুজনেই মূলত সকল মানবজাতি ও তাদের প্রতি নুবুয়াতের পিতা। দুনিয়াব্যাপি বন্যার পর নুহ থেকেই নতুন করে মানব সভ্যতার জন্ম আর ইব্রাহিমের বংশ হতেই পরবর্তী সকল নবী-রাসুলগনের আগমন। এভাবে নুহ মানবজাতির দ্বিতীয় পিতা (আদমের পর) ও ইব্রাহিম ঈমানদারদের পিতা।
তাদের মধ্যে এতো এতো নবী-রাসুল আসার পরও বেশীরভাগ মানুষ ফাসেক হিসেবেই ছিল। এটা সর্বকালেই সত্য। কুরানে যতোবারই “বেশীরভাগ মানুষ”—এর কথা এসেছে, আল্লাহ তাদেরকে মন্দ হিসেবেই দেখেছেন। তবে কিছুসংখ্যক মানুষ হেদায়েতের পথে অবশ্যই ছিল, কিন্তু তারা মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়না।
আয়াত ২৭
ثُمَّ قَفَّيۡنَا عَلٰٓى اٰثَارِهِمۡ بِرُسُلِنَا وَقَفَّيۡنَا بِعِيۡسَى ابۡنِ مَرۡيَمَ وَاٰتَيۡنٰهُ الۡاِنۡجِيۡلَ ۙ وَجَعَلۡنَا فِىۡ قُلُوۡبِ الَّذِيۡنَ اتَّبَعُوۡهُ رَاۡفَةً وَّرَحۡمَةً ؕ وَّرَهۡبَانِيَّةً ابۡتَدَعُوۡهَا مَا كَتَبۡنٰهَا عَلَيۡهِمۡ اِلَّا ابۡتِغَآءَ رِضۡوَانِ اللّٰهِ فَمَا رَعَوۡهَا حَقَّ رِعَايَتِهَاۚ فَاٰتَيۡنَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡهُمۡ اَجۡرَهُمۡۚ وَكَثِيۡرٌ مِّنۡهُمۡ فٰسِقُوۡنَ
তাদের পর আমি একের পর এক আমার রসূলগণকে পাঠিয়েছি। আর ইসা ইবনে মরিয়মকেও তাদের অনুগামী করেছিলাম, তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জিল। এবং যারা তার অনুসরণ করেছিল তাদের অন্তরসমূহে দয়ামায়া ও করুণার সৃষ্টি করেছি। আর বৈরাগ্যবাদের বিদআত তো তারা নিজেরাই বানিয়ে নিয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের বিধান ছাড়া আমি তাদেরকে এই বিধান দিইনি। সেটার হকও তারা যথাযথভাবে আদায় করেনি। সুতরাং তাদের মধ্যে যারা (যথাযথভাবে) ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমি তাদের পুরস্কার দিয়েছিলাম। তবে তাদের অধিকাংশই ফাসেক।
وَقَفَّيۡنَا بِعِيۡسَى ابۡنِ مَرۡيَمَ وَاٰتَيۡنٰهُ الۡاِنۡجِيۡلَ ۙ وَجَعَلۡنَا فِىۡ قُلُوۡبِ الَّذِيۡنَ اتَّبَعُوۡهُ رَاۡفَةً وَّرَحۡمَةً
আর ইসা ইবনে মরিয়মকেও তাদের অনুগামী করেছিলাম, তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জিল। এবং যারা তার অনুসরণ করেছিল তাদের অন্তরসমূহে দয়ামায়া ও করুণার সৃষ্টি করেছি।
এখানে ঈসা আলাইহিস সালাম-এর প্রতি ঈমান আনয়নকারী হাওয়ারীগণের বিশেষ গুণ বৰ্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে—যারা ঈসা আলাইহিস সালাম অথবা ইঞ্জীলের অনুসরণ করেছে, আমি তাদের অন্তরে স্নেহ ও দয়া সৃষ্টি করে দিয়েছি। তারা একে অপরের প্রতি দয়া ও করুণাশীল কিংবা সমগ্র মানবমণ্ডলীর প্রতি তারা অনুগ্রহশীল। ঠিক যেমন সাহাবাবায়ে কিরাম (রাঃ) একে অপরের প্রতি দয়াশীল ও হিতার্থী ছিলেন। অন্যদিকে ইয়াহুদীরা আপোসে এ রকম একে অপরের জন্য হিতাকাঙ্ক্ষী ও দরদী নয়।
وَّرَهۡبَانِيَّةً ابۡتَدَعُوۡهَا مَا كَتَبۡنٰهَا عَلَيۡهِمۡ اِلَّا ابۡتِغَآءَ رِضۡوَانِ اللّٰهِ
আর বৈরাগ্যবাদের বিদআত তো তারা নিজেরাই বানিয়ে নিয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের বিধান ছাড়া আমি তাদেরকে এই বিধান দিইনি।
رَهبانية রাহবানিয়াত-এর অর্থ হল, (বৈরাগ্যবাদ বা সন্ন্যাসবাদ) সংসার ত্যাগ করা (ফকীরী নেওয়া)। অর্থাৎ, দুনিয়ার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে কোন জঙ্গলে বা মরুভূমিতে গিয়ে নির্জনে আল্লাহর উপাসনা-আরাধনা করা। এর পটভূমিকা হল, ঈসা (আঃ) এর পর এমন রাজাদের আগমন ঘটে, যারা তাওরাত ও ইঞ্জীলের মধ্যে বহু পরিবর্তন সাধন করে। যে কাজকে একটি দল মেনে নিতে পারেনি। উক্ত দল রাজাদের ভয়ে পাহাড়ের চূড়া ও গুহায় গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। এখান থেকেই তার সূচনা হয়। যার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল পরিস্থিতির চাপে পড়ে। কিন্তু তাদের পরে আগত অনেক মানুষ তাদের বড়দের অন্ধ অনুকরণে দেশ ত্যাগ করাকে ইবাদতের একটি তরীকা বানিয়ে নেয় এবং নিজেকে গির্জা ও উপাসনালয়ে আবদ্ধ করে নেয়। আর এর জন্য দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করাকে অত্যাবশ্যক গণ্য করে। এটাকেই আল্লাহ মনগড়া বিদআত বলে আখ্যায়িত করেছেন। [আহসানুল বায়ান]
মূল আয়াতে ব্যবহৃত বাকাংশ হচ্ছে إِلَّا ابْتِغَاءَ رِضْوَانِ اللَّهِ - এর দু’টি অর্থ হতে পারে। একটি অর্থ হচ্ছে, “আমি তাদের জন্য রাহবানিয়াত বা বৈরাগ্যবাদ ফরয করিনি। বরং আমি তাদের ওপর যা ফরয করেছিলাম তা ছিলো এই যে, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করবে।” আর অপর অর্থটি হচ্ছে, “এ বৈরাগ্যবাদ আমার ফরযকৃত ছিল না। বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে তারা তা নিজেরাই নিজেদের ওপর ফরয করে নিয়েছিলো।”
দু’টি অবস্থাতেই এ আয়াতটি একথা স্পষ্ট করে তুলে ধরছে যে, বৈরাগ্যবাদ একটি অনৈসলামিক রীতি। এটি কখনো দ্বীনে ইসলামের অংগীভূত ছিল না। এ প্রসঙ্গেই নবী ﷺ বলেছেন যে, “ইসলামে কোন বৈরাগ্যবাদ নেই।” (মুসনাদে আহমাদ) অন্য একটি হাদীসে নবী (সা.) বলেছেনঃ “আল্লাহর পথে জিহাদই হচ্ছে এ উম্মতের বৈরাগ্যবাদ।” (মুসনাদে আহমাদ, মুসনাদে আবু ইয়া’লা)
অর্থাৎ দুনিয়া বর্জন করা এ উম্মতের আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ নয়, বরং এর আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ। আর এ উম্মত ফিতনার ভয়ে ভীত হয়ে বন-জংগল ও পাহাড়-পর্বতে পালিয়ে যায় না বরং আল্লাহর পথে জিহাদের মাধ্যমে তার মোকাবিলা করে। [তাফহীমুল কুরআন]
তারা এ কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য করেছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ পরিষ্কার করে বলে দিলেন যে, দ্বীনে নিজের পক্ষ হতে বিদআত রচনা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায় না। তাতে তা (এই বিদআত) দেখতে যতই সুন্দর হোক না কেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি একমাত্র তাঁর আনুগত্যেই অর্জন হতে পারে। [আহসানুল বায়ান]
فَمَا رَعَوۡهَا حَقَّ رِعَايَتِهَاۚ
সেটার হকও তারা যথাযথভাবে আদায় করেনি।
তারা দ্বিবিধ ভ্রান্তিতে ডুবে আছে। একটি ভ্রান্তি হচ্ছে, তারা নিজেদের ওপর এমন সব বাধ্য বাধকতা আরোপ করে নিয়েছিল যা করতে আল্লাহ কোন নির্দেশ দেননি। দ্বিতীয় ভ্রান্তি হচ্ছে, নিজেদের ধারণা মতে যেসব বাধ্য বাধকতাকে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায় বলে মনে করে নিজেদের ওপর আরোপ করে নিয়েছিলো, সেটার হকও আদায় করেনি এবং এমন সব আচরণ করেছে যার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টির পরিবর্তে তার গযব খরিদ করে নিয়েছে।
এখানে দেখার বিষয় হলো, আল্লাহ তা’আলা বৈরাগ্যবাদের এই বিদআতের তিরস্কারের চাইতে বরং সেটাও সঠিকভাবে আদায় না করাকে বেশী অপছন্দ করেছেন। অর্থাৎ এই বিদআতও যদি তারা সঠিকভাবে আদায় করতো তবুও আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের চান্স ছিল। কিন্তু সেই চান্সও তারা মিস করেছে।
এখানে বিদআত সম্পর্কিত শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার একটি উক্তি উল্লেখ করা যেতে পারে। ঈদে মিলাদুন্নবী পালন বিদআত হওয়া সত্ত্বেও যারা রাসুলুল্লাহ (স)-এর প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা প্রকাশের অন্য কোন পন্থা না জেনে এভাবেই নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করতে অভ্যস্ত হয়ে আছে তাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, “যারা নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিনকে ইদ বানিয়েছে, আল্লাহ তাদের এই ভালোবাসা ও পরিশ্রমের জন্য প্রতিদান দেবেন, বিদআতের জন্য নয়।” [ইকতিদাউস-সিরাতিল মুস্তাকিম : ২/১২৩]
কুরআন মজীদ এখানে বৈরাগ্যবাদরূপী বিদআত আবিষ্কার করা এবং পরে তা যথাযর্থভাবে মেনে চলতে না পারার কথা বলে খৃস্টান ধর্মের কোন্ বিকৃতির প্রতি ইঙ্গিত করছে তার বিস্তারিত বর্ণনা থেকে সঠিকভাবে অনুমান করা যেতে পার।
فَاٰتَيۡنَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡهُمۡ اَجۡرَهُمۡۚ وَكَثِيۡرٌ مِّنۡهُمۡ فٰسِقُوۡنَ
সুতরাং তাদের মধ্যে যারা (যথাযথভাবে) ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমি তাদের পুরস্কার দিয়েছিলাম। তবে তাদের অধিকাংশই ফাসেক।
এরপর আল্লাহ ঈসা (আঃ)-এর সঠিক অনুসারী ও বিদআতিদের মধ্যে যারা সঠিকভাবে সেই রাহবানিয়্যাতের হক আদায় করেছে তাদের অন্তরের যথাযথ ঈমানকে ভ্যালিডেট করে আল্লাহ তালা বলছেন যে তিনি তাদের পুরস্কার দিয়েছিলেন, তাদের জান্নাতী করেছিলেন।
ঈসা (আঃ)-এর সঠিক অনুসারী জান্নাতী মানা যায়, কিন্তু একজন বিদআতি কীভাবে হলো? সেটা বুঝতে আবারও শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার একটি উক্তি উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলেন,
❝বিদআতিদের মধ্যেও এমন থাকতে পারে যাদের অন্তরে-বাহিরে ঈমান আছে। কিন্তু মূর্খ ও বোকা হবার জন্যে তারা কিছু সুন্নতের হেদায়েত মিস করেছে। এরা মুনাফেক বা কাফির কোনোটাই না । এদের মধ্যে শত্রুতা থাকতে পারে, জালিমও থাকতে পারে। এজন্য তারা গুনাহগার। কোন ব্যাখ্যাগত ভুলের কারণে তারা ক্ষমাপ্রাপ্তও হতে পারে। এসবের সাথে সাথেই তাদের মধ্যে এমন ঈমান আর তাকওয়ার লেভেল থাকতে পারে যার ফলে তারা আল্লাহর ওলী হয়েছেন। সেই বেলায়েত তাদের ঈমান ও তাকওয়ার লেভেল অনুপাতেই হবে।❞ [মাজমু আল-ফাতাওয়া ৩/ ২২০]
তবে এটা তো স্পষ্ট যে নিজেদের খৃষ্টান দাবীকারী বেশীরভাগই ছিল ফাসেক, দ্বীনত্যাগী। মূলত বিষয়টা আরও অনেক ভয়াবহ ছিল। মউদুদি রহঃ তার তাফসীরের কিতাবে এসব কথিত “বৈরাগ্যবাদী” খৃষ্টান কুকর্মের লম্বা ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। সেখান থেকে দেখে নেয়া যেতে পারে।
আয়াত ২৮
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ اٰمِنُوۡا بِرَسُوۡلِهٖ یُؤۡتِکُمۡ کِفۡلَیۡنِ مِنۡ رَّحۡمَتِهٖ وَ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ نُوۡرًا تَمۡشُوۡنَ بِهٖ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আন। তিনি তাঁর রহমত হতে তোমাদের দ্বিগুণ দেবেন, ও তোমাদের দেবেন নূর যার সাহায্যে তোমরা পথ চলবে। আর তোমাদের (ত্রুটি-বিচ্যুতি) মাফ করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
اَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ اٰمِنُوۡا بِرَسُوۡلِهٖ
অর্থাৎ, হে মুসা ও ঈসা নবীর উপর ঈমানের দাবীদারগণ, তোমরা তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করো। নিজেদের নবী মুহাম্মাদের (সঃ) উপর ঈমান আনার উর্ধ্বে মনে করো না। যদি নিজেদের নবীদের উপর ঈমান আনার পর শেষ নবীর উপরও ঈমান আনো, তবে দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে দুই নবীর শরীয়তে সঠিকভাবে থাকার বদৌলতে। এই দ্বিগুণ পুরস্কার মুশরিকরা পাবে না। তোমাদের আলাদা করে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। এই অফার লুফে নাও!
یُؤۡتِکُمۡ کِفۡلَیۡنِ مِنۡ رَّحۡمَتِهٖ وَ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ نُوۡرًا تَمۡشُوۡنَ بِهٖ
আর আল্লাহ আখিরাতে পুলসিরাতের ওপর তোমাদের সেই নূর দেবেন যেই নুরের কথা সূরার মধ্যভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেই নুরের অভাবে তোমরা ছুটোছুটি করতে। ঈমান আনো শেষ নবীর ওপর, তবে তোমরাও সেই নূর পেয়ে যাবে।
وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ — তোমরা যেসব ত্রুটি বিচ্যুতিতে এখন জড়িত হয়ে আছো আল্লাহ সেগুলো ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো পরম দয়ালু, ক্ষমাশীল।
আয়াত ২৯
لِّئَلَّا یَعۡلَمَ اَهۡلُ الۡکِتٰبِ اَلَّا یَقۡدِرُوۡنَ عَلٰی شَیۡءٍ مِّنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اَنَّ الۡفَضۡلَ بِیَدِ اللّٰهِ یُؤۡتِیۡهِ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ اللّٰهُ ذُو الۡفَضۡلِ الۡعَظِیۡمِ
আহলে কিতাবরা ভালোভাবে জেনে নিক—আল্লাহর করুনার উপর তাদের কোন একচেটিয়া অধিকার নেই। করুণা সবটুকুই আল্লাহ্র হাতে, তিনি যাকে ইচ্ছে তাকে দেন। আল্লাহ বিপুল করুনার অধিকারী।
হিংসুক ইহুদিরা মনে করতো, দুনিয়াতে শুধুমাত্র তারাই হলো আল্লাহ্র মনোনীত বান্দা যাদের তিনি জাহান্নামের আগুনে পুড়বেন না, সরাসরি জান্নাত দিয়ে দেবেন। তারা মানতেই পারেনি যে তাদের জাতির বাহির (বনী ইসমাইল) হতে শেষ নবী আসতে পারে। এজন্য বহু বছর তারা শেষ নবীর অপেক্ষায় থাকার পরও যখন তাদের মতে উম্মীদের মধ্য হতে নবীর আগমন হলো, সেটা তারা মানতে পারলো না। তাদের দাবী, এই নবুয়ত শুধুমাত্র তাদেরই একচেটিয়া অধিকার। লম্বা সময় যাবত শুধু তাদের মধ্য হতেই নবী আগমন করায় এমন মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে।
এটাই আল্লাহ স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছেন যে, আল্লাহ্র এই ফযলের উপর কারোই নিয়ন্ত্রণ নেই। তিনি যাকে ইচ্ছে তা দান করবেন। তোমরা বলার কে? তোমাদের কাজ শুধুমাত্র নিজেকে সমর্পন করে দেয়া।