সহজ কথা খুব সহজে বোঝেন। পেঁচানোর কিছু নাই। 'আল্লাহর হাত' এর ৩টা মতামত।
১. সালাফী আকীদা: হাত মানে হাত-ই। কেমন হাত, জানি না।
২. মাতুরিদী আকীদা: আকার-আকৃতি কল্পনার সুযোগ আছে, যেটা করা নিষেধ। হাত বলতে আল্লাহ কী বুঝালেন তাও জানিনা, কেমন তাও জানিনা।
৩. আশআরী আকীদা: হাতকে হাত অর্থে নিলে কমবুঝ লোকেরা পাঁচ আঙুলের হাতই কল্পনা করে নিতে পারে। সুতরাং প্রচলিত আরেক অর্থে নেয়াই নিরাপদ। হাত মানে ক্ষমতা, কবজা। [তুলনীয়: টাকাটা হাতে আসুক, তোকে আগে হাতে পেয়ে নিই]
তিনজনেরই এক লক্ষ্য: আল্লাহর সাথে মাখলুকের সাদৃশ্য যেন না হয়।
দুনিয়ার তাবৎ লোকের আইকিউ সমান না। ১ম যুগের মুসলিমদের ফিতরাত, আর আমাদের ফিতরাত এক না৷ তারা যেটা যেভাবে বুঝতেন, আমরা সেটা সেভাবে বুঝতে পারি না। সেসময়কার বহু জিনিস (যেমন ৬ বছরের মেয়ে পাত্রী হিসেবে এলাকায় সুখ্যাতি, আম্মাজান আয়িশা রা.) এখনকার মাথায় ধরে না। একইভাবে গ্রীকদর্শন মানুষের ফিতরাত নষ্ট করে দিচ্ছিল। সালাফী আকীদা মানতে গিয়ে [গ্রীক দর্শনের প্রভাবে] বেদ্বীন হয়ে যাচ্ছিল, প্রশ্ন-সংশয় জেগে উঠছিলো। দীনে আসার শুরুতে যখন শুনলাম 'সিজদা করলাম মানে যেন আল্লাহর কুদরতী পায়ে সিজদা করলাম'। তখন সিজদা করতে গেলে পাঁচ আঙুলের পা মনে ভেসে উঠত, জোর করে সরিয়ে দিতাম। এখন সালাফী আকীদা মানতে আর সমস্যা হয়না: পা মানে পা, কেমন তা জানিনা। সবার দীনের বুঝ সমান না, দীনের পর্যায় সমান না। তখন যা পারতাম না, এখন তা পারি। তখন সেই অবস্থায় আশআরী ব্যাখ্যা ও মাতুরিদী ব্যাখ্যাই আমাকে বাঁচিয়েছে আল্লাহর ৫ আঙুলবিশিষ্ট পা কল্পনা করা থেকে। এখন জ্ঞান ও বুঝের পরিপক্বতা সহজ করে দিয়েছে সবকিছু। এই বিষয়গুলা বুঝতে হবে৷
আল্লাহকে মাখলুকের সদৃশ না মনে করাটাই তিনদলেরই মূল কথা।এই তিনটা ব্যাখ্যার যেকোনো একটা ধারণ করার জন্য আল্লাহ কখনোই আমাকে দোজখে দিতে পারেন না। এতোটা সংকীর্ণতা কখনোই আল্লাহর সাথে যায় না। কেবল সালাফী আকীদা না রাখলে জাহান্নামী, এটা প্রচার করা আল্লাহর শানবিরোধী, আল্লাহর সিফত, রহমাত, ইনসাফের সাথে ঔদ্ধত্য।
যেসব শায়খরা বাকিগুলোর প্রতি ঘৃণা ছড়ায়, প্রান্তিকতার দাওয়াত দেয়, তারা স্পষ্টতঃ মানুষের ফিতরাত ও বৈচিত্র সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখেন না। উম্মাহর হাজার বছরের ইখতিলাফকে দীনের মূল বিষয় বানানো, দাওয়াহর মূল বিষয় বানানো। সেটাকে কেন্দ্র করে বিভেদ-ঘৃণা সৃষ্টিকারী শায়খরা আসলে কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন?
আল্লাহকে মাখলুকের সদৃশ না রাখার জন্য স্রেফ ব্যাখ্যা লেভেলে এসে ব্যাকরণিক মতভেদকে হাতিয়ার বানিয়ে তাকফির-তাবদি? এঁদের চিনুন। এতদিন ফিকহ নিয়ে দলবাজি করেছে, উম্মতকে খেপিয়েছে। এখন যখন মানুষ বুঝেছে, মাযহাবগুলোও কুরআন-হাদিস-আছার ও সালাফদের বুঝের উপরই প্রতিষ্ঠিত, তখন এঁরা এসেছেন নতুন বুলি নিয়ে: 'ফিকহে মতানৈক্য হতে পারে, আকীদায় কোনো মতানৈক্য নেই'।
অবশ্যই আকীদায় কোনো মতানৈক্য নেই৷ এই আকীদায় কোনো মতানৈক্য নেই যে: আল্লাহ মাখলুকের সদৃশ নন। এই আকীদার ব্যাখ্যায় (প্রতিটি ক্ষেত্রে কীভাবে টিকিয়ে রাখা হবে যে আল্লাহ সদৃশ নন) সেই মূলনীতি ঠিক করতে গিয়ে এই মতভেদ হয়েছে, মূল আকীদা তো ঠিকই আছে। এই মতভেদ গত হাজার বছরের উলামাগণ গ্রহণ করেছেন। আশআরী আলিমদের কিতাব পড়েন কেন? বাদ দেন ইমাম নববী, বায়হাকী, গাযালীদের।
এইসব বলে বলে উম্মাহর ভিতর বিভেদ করার চেষ্টা তাদের নতুন নয়। আগেও তারা চেষ্টা করেছিল মাযহাব-ফিকহ এসব নিয়ে। মুস্তাহাব পর্যায়ের বিষয়কে বিরাট করে দেখিয়ে হাজার বছর যাবত উলামাদের গৃহীত মাযহাবকে ভিলেন বানিয়েছে দেশে দেশে। এখন আবার আকীদার 'ব্যাখ্যা' পর্যায়ের বিষয়কে তিলকে তাল বানিয়ে একই কাজ করছে। আর সাধারণ মুসলিমরা সরছে আরও দূরে।
ভায়েরা, আপনার মানহাজই ঠিক আছে ধরে নেন। কিন্তু যারা আপনাকে প্রান্তিকতায় ঠেলে দিচ্ছে, এদেরকে সন্দেহ করুন। এদের গদি-এসি টিকে আছে আপনার উগ্রতার উপর। আপনাকে মানহাজের যত এক্সট্রিমে নিতে পারবে, তত তার রুটিরুজি স্থায়ী হবে, কদর বজায় থাকবে। আর যত আপনি সহনশীল হবেন, এদের লস। নিজ মানহাজেরই ওই প্রান্তে না, বরং এই প্রান্তে আসুন৷
জান্নাত অনেক বড়, আল্লাহর ভাণ্ডার ফুরায় না৷ সবাইকে জান্নাত দিয়ে দিলেও আল্লাহর ফুরাবে না। লক্ষ লক্ষ ট্রিলিয়ন নক্ষত্রের ১ম আসমান, যার একেকটা হয়ত সূর্যের চেয়েই লক্ষ লক্ষ গুণ বড়। সেই ১ম আসমানটাই নাকি ২য় আসমানের তুলনায় 'বিশাল মাঠের কোণে একটা আংটির' মত জাস্ট। এভাবে একটা আরেকটার তুলনায় আংটির মত। সপ্তম আসমানও আরশের কাছে একটা আংটির মত। আল্লাহ কত বড়? আরশের তুলনায় দুনিয়াটুকু কত বড়? সেই বড়, অকল্পনীয় বড় আল্লাহ এত ছোট্ট একটা কারণে, ব্যাখ্যা লেভেলে অন্য একটা মতের কারণে আপনাকে দোজখে দিয়ে দিলেন। তাঁকে অবিশ্বাস করা, শিরক করা তাঁর অহংকারে লাগে, অহংকার তাঁর চাদর, এত বড় যে তাঁরই সাজে। কিন্তু তাঁকে মাখলুক থেকে পবিত্র রাখতে গিয়ে আমাদের চেষ্টা, তাঁর শানের পবিত্রতা রক্ষার জন্য আমাদের চেষ্টাকে তিনি জাহান্নামে দিয়ে দেবেন? এতো বদ ধারণা আমাদের আল্লাহ সম্পর্কে? তাঁর বড়ত্ব সম্পর্কে এতো সংকীর্ণ ধারণা? আমি মানি না, আমার আল্লাহ এতো সংকীর্ণতায় আবদ্ধ না যে, তাঁর পবিত্রতার জন্য লড়াই করার জন্যই তিনি আমাকে দোযখে দিবেন।
সালাফী আকীদা মেনে চলারই চেষ্টা করি। বাকি দুটো আকীদার প্রতি অগাধ সম্মান-ভক্তি ও জরুরত অনুভব করি৷ এতো ফলোয়ার দরকার নাই। কথা পছন্দ না হলে আল্লাহ হাফেজ৷
ভাইয়া শাইখ ড. হাইসাম আল হাদ্দাদ ও এই ভিডিওতে বিষয়টি খুব সুন্দর ভাবে বুঝিয়েছেন। https://youtu.be/m5WJmhMQmEg?si=7Ok58UH-dPIiGSBA
ভিডিওটার একটু রিভিউ দিয়েন ভাই
ভাইয়া শাইখ ড. হাইসাম আল হাদ্দাদ ও এই ভিডিওতে বিষয়টি খুব সুন্দর ভাবে বুঝিয়েছেন। https://youtu.be/m5WJmhMQmEg?si=7Ok58UH-dPIiGSBA
ভিডিওটার একটু রিভিউ দিয়েন ভাই